আমি আইনের অধীনে গ্রেফতার ।
I AM UNDER ARREST
সন্ধ্যা বেলা অদ্ভুত সুন্দর এক ঝিরঝিরে স্নিগ্ধ হাওয়ায় আমার সমস্ত ডালপালা আনন্দে মেতে উঠেছিল। সেই সন্ধ্যায় লান্ডিকোটাল সেনা ছাউনিতে ব্রিটিশ আর্মি অফিসার জেমস স্কোয়াইড (James Squid) ভয়ানক ভাবে মাতাল হয়ে এসে ঘুরছিলেন, তার মাথায় ভয়ানক চিন্তা এখানকার নেটিভ মানুষ গুলো ( যাদের তারা মানুষ মনে করে না।) কিছুতেই তাদের কথা মত চলছে না । সারা ভারত জুরে তারা স্বাধীনতার নেশায় পাগল। লোক গুলো সুযোগ পেলেই তাদের বিরক্ত করছে । এই লোক গুলো সুযোগ পেলে তাকেও ছারবে না। সে তো এই মানুষ গুলোর উপর বেশি অত্যাচার করে নি । কথা না শুনলে একটু শাস্তি দিয়েছে । তবে রুগ্ন লোক গুলো বেশিরভাগ-ই মারা গেছে , আর তাদের পরিবারের মহিলা গুলি হারিয়ে গেছে। যাই হোক সে তো ব্রিটিশ আর্মি অফিসার, নীল রক্ত তার শিরায়, ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পরে ব্রিটিশ মহারানির হাত তার মাথার উপর । তবুও এই নেটিভ গুলো তাকে মানছে না । স্নিগ্ধ হাওয়ায় তার নেশা আর-ও একটু চড়া হচ্ছে, নেশায় তার পা ঠিকমতো মাটিতে পড়ছিল না। হঠাৎ তার খেয়াল হল যে আমি আমার আসল অবস্থান থেকে সরে যাচ্ছি ও তাকে মারতে যাচ্ছি, সে ভয় পেয়ে চিৎকার করে উঠল এবং ভয় পেয়ে তার অধীনস্থ সার্জেন্টকে আদেশ দিল “hey you, arrest the TREE”. বড় সাহেবের হুকুম মেনে বন্দি করা হয় আমাকে। পাছে আমি পালিয়ে যাই, তাই ব্রিটিশ আর্মি অফিসার জেমস স্কোয়াইড (James Squid) এর নির্দেশে বড় বড় শিকল ঝুলিয়ে দেওয়া হল আমার সারা শরীর জুরে ! সেই থেকে আমার বন্দিদশা চলছে। সারা দুনিয়ায় আমার মত বিরল আসামী আর কেউ নেই । পাকিস্তান স্বাধীন হয়েছে ৭২ বছর আগে। অথচ আমার কাছে স্বাধীনতা আসেনি। বন্দি জীবনেই অভ্যস্থ আমি। লান্ডিকোটাল শহরের অতি পরিচিত শিকলে বাঁধা আমার (বটগাছটির) গায়ে লেখা আছে 'I AM UNDER ARREST' নামে সাইনবোর্ড। এই ঘটনা ১৮৯৮ সালের। এক নেশাখোর ব্রিটিশ অফিসারের খেয়ালের কারণে গত ১২১ বছর ধরে বন্দি আমি। আমারপক্ষ নিয়ে কোনো আইনজীবী আজো কথা বলতে আসেননি। কোনো মামলা দায়ের করা হয়নি। এ এক অদ্ভুত ঘটনা।
অবিভক্ত ভারতের লান্ডিকোটাল বর্তমানে পাকিস্তানের Federally Administered Tribal Areas বা ফাটা প্রদেশের অন্যতম শহর। উপজাতি অধ্যুষিত এলাকাটি আলেকজান্ডার থেকে মোগল আমল ও পরবর্তী সময়ে বহু ঐতিহাসিক ঘটনার কেন্দ্র। এখানকার শাসন কায়েম রাখতে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল ব্রিটিশদের। ফলে British Raj Frontier Crimes Regulation (FCR) জারি করা হয়েছিল। পরাধীন ভারতে ব্রিটিশ রাজের ক্রূরতা ও পাগলামির পরিচয় বহনকারী কুখ্যাত আইনের বলি বটগাছটি। স্থানীয় বাসিন্দারাও একই কথা বলেন। তাই কালা কানুনের প্রতীক হিসেবে গাছটি এখনো বন্দি হয়েই রয়েছে।
ড. মুখতিয়ার দুরানি ( পেশোয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ) জানিয়েছেন, ঘটনাটি মর্মান্তিক হলেও এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম। ব্রিটিশ রাজের সময় উপজাতি বহুল এই এলাকার কালা কানুন কেমন ছিল তার উদাহরণ হয়েই রয়েছে এই বন্দি বটগাছ।
শতাব্দী প্রাচীন একটি বটগাছের বন্দি দশা শুধু পাকিস্তানেই নয় বিশ্বজোড়া আলোড়ন তৈরি করেছে।